বৈরী আবহাওয়ায় ধীরগতিতে চলছে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
বৈরী সমুদ্র পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) বহির্নোঙ্গরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য খালাস (লাইটারিং) কার্যক্রম স্থগিত করেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে নেওয়া এই পদক্ষেপের কারণে পণ্য পরিবহন দেরিতে হচ্ছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে বহির্নোঙ্গরে জাহাজজট ও টার্মিনালের ইয়ার্ডে কনটেইনার জটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৯৮ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৈরী সমুদ্র পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) বহির্নোঙ্গরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য খালাস (লাইটারিং) কার্যক্রম স্থগিত করেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে নেওয়া এই পদক্ষেপের কারণে পণ্য পরিবহন দেরিতে হচ্ছে।

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জলোচ্ছ্বাস ও দমকা হাওয়ার কবলে পড়ে বন্দরের বহির্নোঙ্গরে থাকা কয়লা ও এলপিজি বহনকারী চারটি লাইটার জাহাজ তীরে ভেসে আসে। এর মধ্যে দুটি আনোয়ারা উপজেলার গহিরার কাছাকাছি এবং বাকি দুটি পতেঙ্গা উপকূলে আটকা পড়ে।

সিপিএর ভারপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, ‘বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে—এমন পণ্য আপাতত ওঠানামা করানো হচ্ছে না। কেবল পানিতে ভিজলে সমস্যা হবেনা- এমন পণ্য ওঠানামা করানো হচ্ছে। এতে করে স্বাভাবিক দিনের তুলনায় বন্দরের সামগ্রিক কার্যক্রম ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ কমে গেছে।’

পূর্ববর্তী কর্মবিরতিতে বন্দরের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটার কারণে ইতোমধ্যেই কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্দরে কনটেইনার মজুত ছিল ৪২ হাজার ৩১৮ টিইইউ (২০ ফুট মাপের কনটেইনার ইউনিট), যা বন্দরের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ ইইউ-র কাছাকাছি। চলমান ধীরগতির ফলে এই জট আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তবে টানা বৃষ্টিপাতের মাঝেও চট্টগ্রাম শহরের বেশিরভাগ অংশ এবার পানিতে তলিয়ে যায়নি। বর্ষার আগে উন্নত নালা ও খাল পরিষ্কার করায় এমন পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। সাধারণত জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত ডিসি রোড, বাকলিয়া, মুরাদপুর ও চকবাজার এলাকায়ও বড় ধরনের জলাবদ্ধতা দেখা যায়নি।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আগেই খাল খনন ও বড় ড্রেন পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছিলাম। এখন পর্যন্ত প্রচলিত জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে যায়নি।’

তবে বাদুরতলা ও বহদ্দারহাটের কিছু নিচু এলাকায় অস্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল, যা বেলা বাড়ার সঙ্গে কমতে শুরু করে। এ ছাড়া জোয়ারের পানিতে আগ্রাবাদ এলাকায় সাময়িক লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তৌহিদুল আরও জানান, শহরের পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ ঢালে বসবাসকারী বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে করপোরেশন। ‘পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। টানা বৃষ্টি হলে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকা মানুষদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাব,’ বলেন তিনি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে এবং আগামী দুই-তিন দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে।

বর্ষার আগেভাগেই প্রস্তুতি থাকায় শহরজুড়ে বড় ধরনের জলাবদ্ধতা না দেখা দিলেও বৈরী আবহাওয়া চলতে থাকায় কর্তৃপক্ষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।