পতেঙ্গায় পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় আটক ১২

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে মাদক সেবন ঠেকাতে গিয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তার ওপর সংঘবদ্ধ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
হামলাকারীরা ওই কর্মকর্তাকে মারধর করে, তার মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও ওয়্যারলেস সেট ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে
ঘটনায় জড়িত মোট ১২জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের চরপাড়া ঘাটের কাছে মোবাইল ডিউটিতে থাকা উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইউসুফ আলী কিছু যুবককে গাঁজা সেবন করতে দেখেন। তিনি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা প্রথমে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চান। সতর্ক করার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর ওই যুবকরা আরও কিছু লোক সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসে এবং এসআই ইউসুফের পথরোধ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তারা তাকে প্রশ্ন করে, ‘আপনি তো ভুয়া পুলিশ, আপনার আইডি কার্ড কই?’ এরপর কোনো সুযোগ না দিয়েই তার ওপর আকস্মিক আক্রমণ চালায়।
একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হামলার পর এসআই ইউসুফ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছেন, ‘আমার মোবাইল, মানিব্যাগ, ওয়্যারলেস সব নিয়ে গেছে ওরা।’ তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট ছিল। তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আমার মানসম্মান সব শেষ।’
এ ঘটনার পরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তাররা হলেন— সাইমন (২৭) ও আলী ইমাদ প্রকাশ তাফসির ইমাদ (২২)।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পিআর অ্যান্ড মিডিয়া) মাহমুদা বেগম জানান, “এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং দোষীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্তের বিস্তারিত তথ্য শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।”
পুলিশ জানায়, পতেঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে এসআই মোঃ সাইদুল ইসলাম, এসআই সেকান্তর মিয়া, এসআই বেলায়েত হোসেন ও সংগীয় ফোর্সসহ আজ ২ মার্চ দিবাগত রাতে মহানগরীর পাঁচলাইশ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত ছিনতাইকারী চক্রের আরও ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, গনপতি (৫৭), হামিদুর রহমান (৩০), রোহান (২০), (৪) আরিফ প্রমাণিক (৩৫), রাব্বি (৩৫), শুভ (১৯), জীবন (২৬), রুমেল (৩০), রেজাউল করিম (৪৫) ও সিয়াম শেখ (১৮)।
এবিষয়ে পতেঙ্গা মডেল থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনায় জড়িত গ্রেপ্তার ছিনতাইকারী চক্রের আরও ১০ সদস্যকে আইনী প্রক্রিয়া শেষে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হবে।
জানা গেছে, এসআই ইউসুফ আলী ৩৬তম ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা। ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি নৌ-পুলিশ থেকে বদলি হয়ে পতেঙ্গা থানায় যোগ দেন। স্থানীয় অপরাধচক্র সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা কম থাকায় এই ঘটনার শিকার হন বলে মনে করছেন তার সহকর্মীরা। তারা জানান, এসআই ইউসুফ সহজ-সরল ও সৎ প্রকৃতির একজন কর্মকর্তা।
পুলিশের এই হামলার ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। তারা দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।