দক্ষিণ গাজার জনবহুল রাফাহ শহরে বড় ধরনের হামলা চালালে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই প্রথম প্রকাশ্যে তেলআবিবকে এমন কঠোর হুঁশিয়ারি দিল ওয়াশিংটন।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জো বাইডেন বলেছেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি, তারা যদি রাফাহতে যায়, আমি অস্ত্র সরবরাহ করছি না।’
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর গত সাত মাসের অভিযানে ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং তাদের অধিকাংশই বেসামরিক লোকজন। ইসরায়েলি সেনাদের বর্বরতা থেকে রাফাহতে লাখ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
সিএনএনের কাছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেছেন যে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে দীর্ঘ ৭ মাসের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা বোমা ব্যবহার করে বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণ নিয়েছে ইসরায়েল।
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া বোমা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ব্যবহারের ফলে বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বাইডেন দুঃখ প্রকাশ করেন।
বাইডেনের সাম্প্রতিক মন্তব্যটি গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠিন হুশিঁয়ারি বলে মনে করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে রাফাহ শহরে পূর্ণ শক্তিতে সামরিক অভিযান থেকে ইসরায়েলকে বিরত থাকতে চাপ বাড়াল যুক্তরাষ্ট্র।
বাইডেনের মন্তব্যে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইতিমধ্যে বলেছেন, ‘রাফাহ শহরে সামরিক অভিযান থেকে পিছু হটবে না ইসরায়েল। হাজার হাজার হামাস যোদ্ধাকে পরাজিত করতে রাফাহতে পূর্ণ মাত্রায় সামরিক অভিযান চলবে।’
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলে অস্ত্রের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী ও পুরোনো মিত্র। গাজায় যুদ্ধ বাধার পর থেকে স্পষ্টভাবে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে ওয়াশিংটন। ইতোমধ্যে শত শত কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা ইসরায়েলে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক পর্যায়েও ইসরায়েলকে সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন।
কিন্তু ওয়াশিংটনের কোনো নির্দেশনা মানছে না ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। গাজায় বেসামরিক হতাহতের হার হ্রাস করতে গত ৭ মাসে ইসরায়েলকে বেশ কয়েকবার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু ইসরায়েল তাতে কর্ণপাত করেনি।
জাতিসংঘের মতে, জনবহুল রাফাহ শহরে ইসরায়েলি সেনারা স্থল অভিযান চালালে নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। ইসরায়েলকে রাফাহ শহরে হামলা থেকে বিরত রাখতে ডেমোক্র্যাটদের চাপের মধ্যে রয়েছেন বাইডেন। এছাড়া, দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসের ক্রমবর্ধমান ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ বাইডেনের জন্য এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া আরও কঠিন করে তুলেছে।
এমন পরিস্থিতিতে রাফাহ অভিযান নিয়ে ইসরায়েলকে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন বাইডেন। ইসরায়েল অভিযানে গেলে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা হবে বলে জানান তিনি। তবে তেল আবিবের নিরাপত্তায় প্রতিরক্ষামূলক মার্কিন অস্ত্র যেমন আয়রন ডোমের জন্য অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন বাইডেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা গতকাল বুধবার নিশ্চিত করেছেন, গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ঝুঁকির কারণে ওয়াশিংটন ইসরায়েলে বোমার একটি চালান সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
ইসরায়েলের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে ‘খুবই হতাশাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।