বার্মা সাইফুল যেন আতঙ্কের নাম !

চট্টগ্রামে অপহৃত তিনজনকে উদ্ধার, গ্রেফতার চারজন !

দর্পণ প্রতিবেদক : অপহরণকারীদের সুরক্ষিত আস্তানা থেকে অপহৃত তিনজন উদ্ধার করে তার চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ, পাঁচলাইশ ও খুলশী—তিন এলাকাতেই বার্মা সাইফুল যেন আতঙ্কের নাম। জায়গা দখল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অপহরণ থেকে মানুষ খুন—এসব তার বাঁ হাতের খেল। সাইফুল ছাড়াও তার অন্য দুই ভাইয়েরও রয়েছে নিজস্ব বাহিনী। এবার একইদিনে মন্দিরের পুরোহিত-সেবকসহ তিনজনকে অপহরণ করে সাইফুল বাহিনী। এরপর তাদের লুকিয়ে রাখা হয় তার ‘গোপন আস্তানায়’। তাদের পরিবারের কাছে দাবি করা হয় ৯ লাখ টাকা। করা হয় মারধর-অত্যাচার।

খবর পেয়ে শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ওই অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযানে যায় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে স্থান পাল্টায় অপহরণকারীরা। তবে সেখানেও উপস্থিত হয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। এরপর ভিকটিমদের উদ্ধারের পাশাপাশি গ্রেপ্তার করা হয় চার অপহরণকারীকে। যারা সবাই শীর্ষ সন্ত্রাসী বার্মা সাইফুলের ক্যাডার।

গ্রেপ্তার চারজন হলেন—বাছির আহম্মদ রানা (২৭), মো. জিহাদ (২৪), মো. আরিফ (২৪) এবং মো. ইমন হোসেন সাদ্দাম (২৩)।

উদ্ধারকৃত ভিকটিমরা হলেন—ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের পুরোহিত কেশব মিত্র দাস (৪৩), সেবক রুবেল রুদ্র (৪২) এবং বায়েজিদ থানার হিলভিউ এলাকার বাসিন্দা সমির দাস (৪৫)।

এদিকে, এ বিষয়ে জানাতে রবিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে নগর পুলিশের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন উপ-কমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) দিনের বিভিন্ন সময় পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ আবাসিক এলাকা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে ওই ব্যক্তিদের অপহরণ করা হয়। এরপর তাদের ওই এলাকার একটি ভবনের চতুর্থ তলায় আটকে রেখে ৯ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এছাড়াও অপহৃত ভিকটিমদের ব্যাপক মারধর করা হয়।’

রইছ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে অভিযান চালালে অপহরণকারীরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এবং শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের পেছনের বাগানে ভিকটিমদের লুকিয়ে রাখে।’

‘সিএমপির ডিবি উত্তর-দক্ষিণ বিভাগের একটি টিম গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পাঁচলাইশ থানার পলিটেকনিক মোড় সংলগ্ন শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের পেছনের একটি বাগান থেকে অপহৃত তিন ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়। এসময় পাঁচটি মোটরসাইকেল, ১০টি কিরিচসহ বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় চারজনকে।’ বলেন তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘গ্রেপ্তার একজন হলো আসিফ। যার বিরুদ্ধে সিএমপির বিভিন্ন থানায় ১০টি মামলা রয়েছে। রানার বিরুদ্ধে ৮টি মামলা রয়েছে। বাকি জিহাদ এবং আরিফের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে। মামলাগুলো বেশিরভাগই চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি এবং চাঁদাবাজির। সুতরাং আমরা বলতে পারি তারা পেশাদার অপরাধী।’

অপহরণ করে যে এলাকায় রাখা হয়েছে সেটি শীর্ষ সন্ত্রাসী বার্মা সাইফুলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সাইফুলের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা আছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে রইছ উদ্দিন বলেন, ‘গ্রেপ্তার চারজনই আমাদের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী বার্মা সাইফুলের সহযোগী ছিল। আমরা সাইফুলকে এখনো আটক করতে পারিনি। তালিকাভুক্ত যেকোনো সন্ত্রাসীকেই গ্রেপ্তারে আমাদের প্রচেষ্টা থাকে। বার্মা সাইফুলকেও অতিদ্রুত গ্রেপ্তারে আমরা চেষ্টা করবো। তিনি আমাদের কাছে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত। তার রাজনৈতিক পরিচয় এখানে মূখ্য নয়। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।