প্রাচ্যের রানি চট্টগ্রাম

ইটপাথরের মাঝেও সবুজের সমারোহের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আসতে হবে প্রাচ্যের রানি চট্টগ্রামে। যেখানে রয়েছে অবসরে ঘুরে বেড়ানোর শতাধিক দর্শনীয় স্থান। দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামেই। এই শৈলশহরে আছে সমুদ্রসৈকত, তপ্ত রোদে চিকচিক করা বালিয়াড়ি, পানিতে বড় বড় জাহাজের ভিড়, মুক্ত উদ্যান, মেঘ-পাহাড়ের মিতালি, পাহাড়ের বুকে আঁকাবাঁকা সড়ক, গাছে ঘেরা স্বচ্ছ জলরাশির প্রাকৃতিক ফয়’স লেক, সবুজের গালিচা, বিচিত্র জীবজন্তুতে ভরা চিড়িয়াখানা, প্রাচীন সব স্থাপনাসহ আরও কত কী…ঢাকা থেকে বাসে কিংবা ট্রেনযোগে সহজেই চট্টগ্রাম শহরে আসা যায়। চট্টগ্রাম জেলার স্বাগতিক উপজেলা মিরসরাই। নদী, পাহাড়ের মিশ্রণে উপজেলাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার। দুর্গাপুর ইউনিয়নের মহামায়া লেক, লেকের স্বচ্ছ জলরাশি, জলের মাঝেই ছোট টিলায় ঘন বন, তার ভেতর থেকে বনমোরগ আর খেঁকশিয়ালের ডাক, লেকের পানিতে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার, কায়াকিং, নৌকায় ঘুরাঘুরি করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এ উপজেলায় আছে ১২টি পাহাড়ি ঝরনা।

খৈয়াছড়া ঝরনা

মিরসরাই বড়তাকিয়া বাজারের সামান্য উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পুব পাশে একটি কাঁচা-আঁকাবাঁকা রাস্তা রেললাইন ডিঙিয়ে পাহাড়ে গিয়ে মিশেছে। খৈয়াছড়া ঝরনায় গাড়িতে করে যাওয়ার সুযোগ না থাকলেও কাছাকাছি গ্রাম পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশা যায়। ভাড়া ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। কিছু পথ পায়ে হেঁটে পাথুরে ঝিরিপথ।

ও পাহাড়ি ঢালু রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছতে হয়। বৃষ্টির দিনে খৈয়াছড়ার পথ বেশ বিপজ্জনক। তবে পৌঁছাতে পারলে অনাবিল আনন্দ আর জলপ্রপাতের মনোরম সৌন্দর্যের মায়ায় সব কষ্ট-শ্রম ভুলে যাওয়া সম্ভব।

নাপিত্তাছড়া ঝরনা

মিরসরাইয়ের নয়দুয়ারিয়া এলাকা। গাড়ি থেকে নামলেই নাপিত্তাছড়া ঝরনায় যাওয়ার রাস্তা চোখে পড়বে। এখানে রয়েছে মোট তিনটি ঝরনা। প্রথম দুটি ঝরনা আকারে ছোট হলেও শেষেরটি বেশ বড় ও আকর্ষণীয়। গহিন পাহাড়ে অবস্থিত এসব ঝরনায় গাড়ি যায় না, কিছু পথ হাঁটতে হয়। স্থানীয়রা এগুলোকে কুপিকাটাখুম, মিঠাছড়ি ও বান্দরখুম হিসেবেও ডাকে।

এক ট্রেইলে তিন ঝরনা

সীতাকুণ্ড উপজেলার প্রবেশদ্বার ও মিরসরাইয়ের শেষ সীমানা বড় দারোগারহাট বাজারের কিছুটা উত্তরে মহাসড়কের পুব পাশে আছে একটি ইটভাটা। সেই ভাটার পাশঘেঁষে সোজা একটি কাঁচা মেঠোপথ পাহাড়ের দিকে চলে গেছে। ছাগলকান্দার আরেক নাম কমলদহ ঝরনা কিংবা পাহাড়কান্দা ঝরনা। এই ট্রেইলে আছে তিনটি ঝরনা। প্রথম ধাপটি নিচ থেকে দেখা গেলেও পরের দুই ধাপ দেখতে ঝরনা বেয়ে ওপরে উঠতে হবে। তবে বর্ষাকালে এ ঝুঁকি কখনই নেওয়া যাবে না।

সহস্রধারা-২ ঝরনা

প্রকৃতির অনন্য সৃষ্টি সহস্রধারা-২ ঝরনার পানি গড়িয়ে পড়ছে বিশাল লেকে। লেকের চারপাশে ঘন বন, পানির ওপর সাদা বকের দলের ওড়াউড়ি দেখতে হলে নৌকায় যেতে হয়। উঁচু থেকে গড়িয়ে পানি পড়ছে কূপে, সেখান থেকে যাচ্ছে লেকে। যেতে হলে নামতে হবে সীতাকুণ্ডের ছোট দারোগারহাট বাজারে। এ ছাড়া এখানে আছে বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান। পাহাড়ের প্রকৃতি, ঝরনার রূপ আর নানারকম জীবজন্তুকে কাছ থেকে দেখার সবচেয়ে ভালো জায়গা বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান। পুরো উদ্যানটি মিরসরাই থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত বিস্তৃত।

বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক এবং সহস্রধারা-১ ঝরনা

সহস্রধারা-১ ঝরনাটি সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কে। সহজেই যাতায়াত করা যায় এই ইকোপার্কে। পিচঢালা সড়ক পাহাড় বেয়ে উঠে গেছে চূড়ায়। এই ঝরনাটির পাশাপাশি এখানে দেখা যাবে ইকোপার্কের সৌন্দর্য। কবি নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত এই পার্কে আছে ১০০ রকমের গাছ, লেখা আছে পরিচিতিও। সেই সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন ফুলবাগান, ছনের ছাউনির গোলঘর, ওয়াচ টাওয়ার, গ্রিনহাউসও।

চন্দ্রনাথ পাহাড়

১২০০ ফুট উচ্চতার চন্দ্রনাথ পাহাড় সবুজে বিস্তৃত, আছে পাহাড়ি ঝরনা ও কূপ, ঘন বন, পাখপাখালি ও বানর-হরিণ, প্রাচীন মঠ-মন্দির, আদিবাসীদের ঝুপড়ি ঘর। এই চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে সমুদ্রের বিশালতা দেখার এক অপার মনোমুগ্ধকর সুযোগ তৈরি করে।

গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত

গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত নান্দনিক প্রকৃতির এক প্রতিচ্ছবি। গাঁয়ের মেঠোপথ পেরিয়ে যত দূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। বেড়িবাঁধ পার হলেই বাঁকা খাল, জেলেরা নৌকা নিয়ে ভাটার অপেক্ষায়, উজানে পাড়ি দেবে বলে। একটু হেঁটেই দেখা মেলে সবুজ গালিচার মতো ঘাসের মাঠ। পর্যটকের ভিড়, ঢেউয়ের তালে বোটের চলাচল আর কেওড়া গাছের সারি গুলিয়াখালীর সৌন্দর্যকে আরও সুন্দর করে তুলেছে।

শেষ বিকালে সাগরের জলে অস্তমিত সূর্যের রক্তিম আভা, ওপরে মায়াবি আকাশ আর ঝিরিঝিরি বাতাসে গুলিয়াখালী সৈকত সোনালি রঙের খেলায় মেতে ওঠে। অনেকেই গুলিয়াখালীতে উপভোগ করেন জোছনা রাত। সীতাকুণ্ড সদর বাজারে নেমে বাজার থেকে সিএনজি অটোরিকশায় যাওয়া যায়। ভাড়া ২০০ টাকা।

আগুনের কুণ্ড

অবাক করা সত্য হলো সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড পাহাড়ের টিলায় একটি পানির কূপে ব্রিটিশ আমল থেকে আজ অবধি রাতদিন ২৪ ঘণ্টা অনর্গল জ্বলছে আগুন। যা নিয়ে আলাদা বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় ব্যাখ্যা আছে। তবে দর্শনার্থীদের কাছে স্থানটি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে শত বছরের কিছু স্থাপনার দেখাও মেলে এখানে।

ভাটিয়ারী লেক, সানসেট পয়েন্ট, মাটি টা

ভাটিয়ারি বাজারে নেমে পূর্ব পাশে চলে গেছে বড় দিঘির পাড় লিংক রোড। উঁচু-নিচু, ঢালু এ সড়কে চললেই চোখে পড়বে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের ভাটিয়ারি লেক। লেকের স্বচ্ছ পানি, পিরামিড আকৃতির বড় বড় পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। আছে লেকের পানিতে নৌকায় চড়া ও বড়শি ফেলার সুযোগও। এই পথেই আছে সানসেট পয়েন্ট, যেখান থেকে সূর্যাস্ত দেখা যায় অন্যভাবে।

ভাটিয়ারির আরেক দর্শনীয় বিনোদন কেন্দ্রের নাম মাটি টা। বড় দিঘির পাড় যেতে ভাটিয়ারি লিংক রোডে প্রথম চেকপোস্টের আগে হাতের বাঁয়ে একটি সরু সড়ক চলে গেছে উত্তরে। এই সড়কেই খুঁজে পাওয়া যাবে প্রকৃতির মেলবন্ধনে কৃত্রিমভাবে তৈরি দারুণ জায়গা মাটি টা রিসোর্ট। এখানে আছে পানির ওপর ঝুলন্ত কাঠের দঁড়ির দোলনা, ছনের ছাউনির দোতলা, ত্রিতলা দৃষ্টিনন্দন ঘর, বেতের তৈরি নানারকম দোলনা, বাঁশের তৈরি দোতলা রেস্টুরেন্ট। যেখান থেকে দেখা যায় পাহাড়ের দৃশ্য। রয়েছে লেকের পানিতে বোটিং, কায়াকিং করার ব্যবস্থা।

ফয়’স লেক

চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়তলীতে প্রায় ৩২০ একর জমির ওপর স্থাপিত পাহাড়ে ঘেরা প্রাকৃতিক হ্রদটিকে বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান কনকর্ড গ্রুপ ভিন্ন এক রূপ দিয়েছে। যা ফয়’স লেক নামে পরিচিত। ব্রিটিশ আমলে মিস্টার ফয় এই লেকটি করেছিলেন। এখানে শিশুদের জন্য আছে হরেকরকম রাইডিং, মজার মজার খাবারের দোকান, হ্রদের স্বচ্ছ পানিতে বোটে ঘোরাঘুরি, ওপারে পাড়ি দিয়ে সি-ওয়ার্ল্ডে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ।

হ্রদের পাড়ে নান্দনিক বিলাসবহুল রিসোর্ট, সুইমিংপুল, ওয়াটার পার্ক। বেইসক্যাম্প নিয়ে আছে ফয়’স লেকের আলাদা জগৎ। যেখানে আছে কায়াকিং, প্যাডেল বোটিং, নাইট সাফারি, বার্ড ওয়াচিং, টিম বিল্ডিং অ্যাক্টিভিটিজ, লিডারশিপ ট্রেইনিং, অবস্ট্রাকল কোর্সেস, ট্রিপটপ অ্যাডভেঞ্চার, মাড ট্রেইল, রিভার ক্রসিং, জায়ান্ট হ্যামলক, ওয়াটার জিপলাইন, পেইনবল, ইয়োগা অ্যান্ড মেডিটেশন, জায়ান্ট সুইয়িং, ট্রেজার হান্টসহ আরও অনেক কিছু। চট্টগ্রাম শহরের যেকোনো জায়গা থেকে ফয়’স লেক যাওয়ার রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, মিনিবাস এবং ভাড়ায় গাড়ি পাওয়া যায়।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা

ফয়’স লেকের পাশেই অবস্থিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। এটি দেশের অন্যতম সমৃদ্ধ চিড়িয়াখানা। বর্তমানে এখানে সব ধরনের প্রাণীরই দেখা মেলে। মাত্র ৭০ টাকার টিকিটে চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করে বাঘ, সিংহ, গন্ডার, কুমিরসহ বিরল প্রজাতির নানা প্রাণী কাছ থেকে দেখা যাবে।

ওয়ার সিমেট্রি

শহরের জিইসি মোড় থেকে গোল পাহাড় মোড়। এরপর হাতের ডানে উঁচু সড়ক গিয়ে মিশেছে পাহাড়ের চূড়ায়। এখানেই আছে মুগ্ধ করা ওয়ার সিমেট্রি। এটি মূলত দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে নিহত ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীর সদস্যদের সমাধিস্থল। তবে এখন এখানে মানুষ অবসরে সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন।

সিআরবি শিরীষতলা

বড় বড় গাছপালা আর উঁচু পাহাড়ে ঘেরা চট্টগ্রামের সিআরবির শিরীষতলা রূপের আরেক রানি। গাছের ছায়ায় নিরিবিলি বসে থাকতে চাইলে সিআরবির শিরীষতলা হতে পারে সেরা স্থান। এ ছাড়া এখানে অবস্থিত ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ঐতিহ্য লাল দালানের কেন্দ্রীয় রেলওয়ের চোখজুড়ানো ভবন এবং চারপাশের পরিবেশ আপনাকে অবাক করবে।
ডিসি পার্ক
চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশের আগে ঘুরা যাবে ফৌজদারহাটে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে দুবাইয়ের মিরাকল গার্ডেনের আদলে গড়ে ওঠা ডিসি পার্ক। কম খরচে প্রকৃতির সঙ্গে হারিয়ে যেতে চাইলে ডিসি পার্কে আসতেই হবে। এখানে আছে বিশাল দিঘি, পানিতে ভাসমান কাঠের পুল, শিশুদের খেলনার রাইডিং, সারি সারি খেঁজুর গাছ, দেশের ঐতিহ্যবাহী সব নৌকা নিয়ে জাদুঘর, অজস্র ফুলের সমারোহ আর ফুল দিয়ে বানানো নানারকম রেপ্লিকা।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম শহরে টাইগারপাস, আমবাগানের ইউরোপিয়ান ক্লাব, শেখ রাসেল শিশু পার্ক, বাটালি হিল, জিলাপীর পাহাড়, ডিসি হিল, আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠ, স্বাধীনতা কমপ্লেক্স, সেনানিবাস পার্ক, বায়েজিদ লিংক রোড, কর্ণফুলী সেতু, বোট ক্লাব, পতেঙ্গা নেভাল, বন্দর এলাকা, কর্ণফুলী টানেল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা যাবে।

পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত

ডিসি পার্ক থেকেই বের হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে ছুটে গেছে আউটার রিং রোড়। ১৫.২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ রোডের শেষপ্রান্তে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত এ সৈকতটি অবসরের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয়। সৈকতে আছে প্রশস্ত হাঁটার রাস্তা। দৃষ্টিনন্দন সারি সারি ব্লক।

এসবের ওপরে বসে দখিনা হাওয়া গায়ে লাগিয়ে সমুদ্রের বিশালতা কিছুটা আঁচ করা সম্ভব। এ সৈকতের পাঁচ কিলোমিটার লম্বা বালুচরে নেমে হাঁটা যায়। সন্ধ্যা হলেই জাহাজের ভিড় থেকে জ্বলে ওঠে মিটিমিটি আলো। সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত দেখতে পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর দারুণ জায়গা এই সৈকত।

বঙ্গবন্ধু টানেল ও পারকি সৈকত

পতেঙ্গা সৈকতের পাশেই কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল। নদীর তলদেশ দিয়ে তৈরি দেশের প্রথম সুরঙ্গপথ এই বঙ্গবন্ধু টানেল। এর দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। এই টানেলের ভিতর দিয়ে যাওয়া যায় আনোয়ারা পারকি সমুদ্রসৈকতে। ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সৈকতে যেতে পড়বে সরু রাস্তার দুই পাশে সারি সারি গাছ, বিস্তৃত সবুজের প্রান্তর, মাছের ঘের। সৈকতের উত্তর দিকে হাঁটলে কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা এখানেই দেখা যায়।

পারকি সৈকতের পথেই আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আরেক নিদর্শন কর্ণফুলী ইপিজেড এলাকা। পাহাড়ের বুক চিরে চলে গেছে আঁকাবাঁকা রাস্তা। এখানে মাঝে মাঝে দেখা মেলে হাতির পালেরও।

বাঁশখালী ইকোপার্ক

চট্টগ্রাম শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরের বাঁশখালীতে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে উঁচু-নিচু পাহাড়, লেকের স্বচ্ছ পানি ও ১ হাজার হেক্টর বনাঞ্চল ঘিরে সরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বাঁশখালী ইকোপার্ক। মানুষের চিত্তবিনোদনের এ জায়গাটি বন্যপ্রাণীর বৃহৎ আবাসস্থল। ঋতুবৈচিত্রের সঙ্গে রূপ বদলাতে থাকে বাঁশখালী ইকোপার্ক।

ভেষজ উদ্ভিদের বন, অর্নামেন্টাল গাছসহ ৩১০ প্রজাতির গাছ রয়েছে এখানে। আছে পিকনিক স্পট, দ্বিতল রেস্ট হাউস, হিলটপ কটেজ, রিফ্রেশমেন্ট কর্নার, দীর্ঘতম ঝুলন্ত ব্রিজ, ওয়াচ টাওয়ার এবং মিনি চিড়িয়াখানা। এই পার্কের সুবিশাল দুটি লেকে রয়েছে মাছ ধরার সুযোগ। ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা মিলবে মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, চিত্রা বিড়াল, মেছো বাঘ ও নানা জাতের পাখি। শীতকালে অতিথি পাখির কলরবে মুখরিত হয়ে ওঠে সবুজের এই রাজ্য।

চট্টগ্রাম শহরের শাহ আমানত সেতু (কর্ণফুলী ব্রিজ) থেকে এস আলম বাসে মাত্র ১০০ টাকায় বাঁশখালী ইকোপার্কে যাওয়া যায়। এ ছাড়া সিএনজি অটোরিকশা কিংবা প্রাইভেট গাড়িতেও যাওয়া যায়।

ফটিকছড়ি চা ও রাবার বাগান

ফটিকছড়িতে রয়েছে ১৮টি চা বাগান। সবুজের ঘেরা চা বাগানের শ্রমিকদের পাতা তোলা আর বাগানের জন্য তৈরি করা কৃত্রিম লেক যে কারও মন কাড়বে। বাগানের দর্শনীয় স্থান হিসেবে মালিক ও ম্যানেজারের জন্য আলাদা বাংলোগুলোও দেখার মতো সুন্দর। বাংলোর সামনে রয়েছে সবুজ মাঠ, চারপাশ সবুজ গাছের আইল্যান্ড, ফুলের বাগান, দোলনা। সব বাগানের বাংলো প্রায় একই ধরনের। ভিতরে বাইরে দেখলে মনে হবে কোনো শৌখিন রাজার বাগানবাড়ি। চা বাগানের সঙ্গে এখানে রয়েছে বেশকিছু ড্রাগন ফলের বাগানও।
চট্টগ্রাম শহর থেকে ফটিকছড়ি যাওয়া যায় লোকাল বাসে ৭০ টাকায়। এসি বাসে ১০০ টাকায়। ফটিকছড়ি সদর থেকে যাওয়া যাবে সব বাগানে। উপজেলা সদর থেকে একেকটি বাগানের দূরত্ব প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার। যাওয়ার জন্য লোকাল সিএনজি অটোরিকশা ও বাস রয়েছে। বাগানের দুরত্বভেদে ভাড়ার তারতম্য আছে। তবে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যেই প্রাইভেট গাড়িতে ঘুরে আসা যাবে চা বাগান থেকে।

মাইজভান্ডার দরবার শরিফ

দেশ-বিদেশ থেকে সারা বছর লাখো ভক্ত, পর্যটকের আগমন ঘটে ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার দরবার শরিফে। এই দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী। তার মাজারের গম্বুজ পবিত্র কোরানের আয়াত সংবলিত কারুকার্যে গড়া। তার খলিফা হজরত গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারীর মাজার চার গম্বুজবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন মিনার এবং হজরত জিয়াউল হক মাইজভান্ডারীর রওজা শরিফ শাপলা ফুলের আদলে নির্মিত। যা ভক্ত-পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে।