ছোট সাজ্জাদের ফের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর

দর্পণ প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ প্রকাশ ‘বুড়ির নাতি’কে নগরের বাকলিয়া থানায় হওয়া জোড়া খুনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে আদালত ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এছাড়া চান্দগাঁও থানার একটি মামলায় সাজ্জাদের ফের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন পৃথক আদালত।

রবিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ার এবং ৬ষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে পৃথকভাবে এ আদেশ দেন।

জোড়া খুনের মামলায় রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন— মো. বেলাল ও মানিক।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. মফিজ উদ্দীন জানিয়েছেন, বাকলিয়া থানায় জোড়া খুনের ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামিকে অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে তাদের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই মামলায় কারাবন্দী সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেছেন।

তিনি আরও জানান, সাজ্জাদকে আজ চান্দগাঁও থানার তাহসীন হত্যা মামলায় ৬ষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

এর আগে গত ১৫ মার্চ দিবাগত রাতে রাজধানীর তেজগাঁও থানার বসুন্ধরা সিটি থেকে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ২৯ মার্চ দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে বাকলিয়া থানার এক্সেস রোড এলাকায় প্রাইভেটকারে দুর্বৃত্তের গুলিতে মো. আব্দুল্লাহ ও মো. মানিক নামে দুজন নিহত হয়। এ ঘটনায় ১ এপ্রিল বাকলিয়া থানায় নিহত মোহাম্মদ মানিকের মা ফিরোজা বেগম বাদী হয়ে সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী শারমিন সহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পরে গত ৩ এপ্রিল ভোরে নগরের বহদ্দারহাট এলাকা থেকে বেলালকে এবং ফটিকছড়ি উপজেলা থেকে মানিককে গ্রেপ্তার করা হয়। বেলাল ‘সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন’ এবং মানিক মোটর সাইকেল সরবরাহ করেছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য।

গত বছরের ২১ অক্টোবর বিকেলে নগরের চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়ায় একদল যুবক প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে তাহসীনকে। এলাকার আধিপত্য নিয়ে দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী-সারোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা ও ছোট সাজ্জাদের বিরোধে খুন হন তাহসীন। তিনি সারোয়ার বাবলার অনুসারী ছিলেন।

আলোচিত এইট মার্ডার মামলার মৃত্যুণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি সাজ্জাদ আলী খান। বর্তমানে বিদেশে পলাতক। বিদেশে বসেই নির্মাণাধীন ভবন, বাসাবাড়ি এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছিলেন এই সাজ্জাদ। চাঁদা না দিলে প্রাণে মারার হুমকি নয়তো হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগী ও পুলিশের বরাতে এমন অহরহ অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই সাজ্জাদের সহযোগী হিসেবে অপরাধজগতে পদার্পণ করেন ছোট সাজ্জাদ ওরফে বুড়ির নাতি।

ছোট সাজ্জাদ বায়েজিদ বোস্তামী থানা-সংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে।

গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। অবশ্য পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। সরকার পতনের পর গত বছরের ৫ আগস্ট বিএনপি চট্টগ্রাম বিভাগের এক তরুণ প্রভাবশালী নেতার আশ্রয়ে চলে যান সাজ্জাদ।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় শটগান হাতে সাজ্জাদ হোসেনসহ আরও দুজন গুলি করতে করতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশ করেন। এরপর ওই ভবন মালিকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

একই বছরের ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন–কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। এই চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের ঘটনার দুই মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়।

এছাড়া ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসায় গুলি করেন সাজ্জাদ তার সহযোগীদের নিয়ে। এছাড়া ২৭ অক্টোবর চাঁদা না পেয়ে দলবল নিয়ে মো. হাছান নামের এক ঠিকাদারের চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকার বাসায় গিয়েও গুলি করে সাজ্জাদ বাহিনী।

অন্যদিকে, বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী খানের একসময়ের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ সারোয়ার হোসেন বাবলা। তিনি নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার খোন্দকার পাড়ার কালা মুন্সির বাড়ির আব্দুল কাদেরের ছেলে। চার বছর জেল খেটে তিনি পালিয়ে যান ভারতে। সেখানে পালিয়ে থাকা ‘বড়ভাই’ সাজ্জাদের দেখভালে ছিলেন দুবছর।

২০২০ এ দেশে ফিরেই গ্রেপ্তার হন ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। পরে বের হয়ে চার বছর পালিয়ে ফের গ্রেপ্তার হন ২০২৪ সালের জুলাইয়ে। সরকার পতনের পর জামিন পান তিনি। আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় ছোট সাজ্জাদের সঙ্গেও।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, নগরের ডবলমুরিং, পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ বোস্তামি থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে মোট ১৮টি মামলা রয়েছে। সবগুলোতে জামিনে রয়েছেন তিনি।