ঈদুল আজহার টানা ১০ দিনের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত। রাজধানীতে ফিরছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। কিন্তু, চাহিদার তুলনায় বাসের পরিমাণ কম। এ কারণে কুমিল্লায় তৈরি হয়েছে ভয়াবহ পরিবহন সংকট। দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকে বাস পাচ্ছেন না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ অনেক যাত্রী।
শনিবার (১৪ জুন) সকাল থেকে কুমিল্লা শহরের শাসনগাছা, জাঙ্গালিয়া, ক্যান্টনমেন্ট, পদুয়ার বাজার ও আলেখার চর বিশ্বরোড এলাকায় অনেক মানুষের ভিড় দেখা গেছে। প্রচণ্ড গরম ও বাস সংকটের কারণে যাত্রীদের চোখে-মুখে বিরক্তি ও অসহায়ত্ব। অনেকে মাথায় ব্যাগ নিয়ে রোদে দাঁড়িয়ে আছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
আলেখার চর বিশ্বরোডে অপেক্ষারত পোশাককর্মী আব্দুল হাকিম বলেছেন, “ঈদের ছুটিতে এসেছিলাম। কাল অফিস শুরু হবে। এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি, একটা বাসও পাচ্ছি না। এই গরমে ভিড়ের মধ্যে কষ্ট পাচ্ছি।”
ঢাকায় ব্যবসা করেন মোহাম্মদ আক্তার হোসেন। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আলেখার চর বিশ্বরোড মোড়ে। তিনি বলেন, “এক ঘণ্টা হয়ে গেছে, কোনো বাসে উঠতে পারিনি। বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে গরমে। বিকল্প কোনো বাহনও নেই। জানি না, কখন ঢাকায় পৌঁছাতে পারব।”
যাত্রীদের অভিযোগ, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর থেকে আসা দূরপাল্লার বাসগুলো যাত্রী বোঝাই করে কুমিল্লা অতিক্রম করছে। ফলে, কুমিল্লা থেকে যাত্রীদের নিচ্ছে না। যারা কোনোমতে বাসে উঠতে পারছেন, তাদেরকে দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে।
এশিয়া লাইনের বাসচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, “ঢাকা থেকে খালি বাস এনে যাত্রী তুলি, কিন্তু কুমিল্লা থেকে যে পরিমাণ যাত্রী যাচ্ছে, সেটা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। রাস্তায় এত যাত্রী, থামলে সবাই বাসে উঠতে চায়। আমরা বাধ্য হয়ে অনেককে ফেলেই চলে যাচ্ছি।”
একই কথা বললেন দাউদকান্দি থেকে ঢাকাগামী গ্লোরি পরিবহনের বাসচালক শরিফুল। তিনি বলেন, “আগে প্রতিটি ট্রিপে ৪০-৫০ জন যাত্রী হতো। এখন একেকটা বাসে উঠতে চায় ৭০-৮০ জন। অনেকে বাসের ছাদে ওঠার চেষ্টা করছে, কিন্তু আমরা অনুমতি দিচ্ছি না নিরাপত্তার কারণে।”
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি ও কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. খায়রুল আলম বলেছেন, “একসঙ্গে এত মানুষ ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীতে ফিরছে, এটা স্বাভাবিক। বাস সংকট সৃষ্টি হয়েছে হঠাৎ চাপের কারণে। তবে, কুমিল্লার সব বাস টার্মিনালে আমরা বিশেষ নজরদারি করছি। মহাসড়কে এখন পর্যন্ত কোনো যানজট নেই। টোল প্লাজাগুলো সচল আছে। আশা করছি, আজকের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”
তিনি আরো বলেন, “এ ধরনের যাত্রীচাপকে বিবেচনায় নিয়ে আগামী ঈদের আগে প্রস্তুতি নিতে হবে পরিবহন কর্তৃপক্ষকে। তা না করলে প্রতিবছর একই ধরনের ভোগান্তির পুনরাবৃত্তি হবে।”
চলমান তাপদাহের কারণে ভোগান্তি আরো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে, শিশু ও বৃদ্ধ যাত্রীদের কষ্ট বেশি হচ্ছে। কিছু যাত্রী বাস না পেয়ে ভ্যান, সিএনজি অটোরিকশা বা মাইক্রোবাসে ঢাকায় যাচ্ছেন অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে।
শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ডের দোকানি মামুন মিয়া বলেছেন, “আজ সকাল থেকে অনেক মানুষ এসেছে, কিন্তু গাড়ি নেই। সবাই গরমে কষ্ট পাচ্ছে।”