চট্টগ্রামে গৃহকর্তার বাসায় ডাকাতি, গ্রেফতার ২ !

গৃহকর্তার বাসায় ডাকাতির পরিকল্পনা করেন তারই গৃহকর্মী!

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার প্রবর্তক সংঘের বিপরীতে ছয়তলা ভবনের মালিক কাজী লোকমান হাকিম। ভবনের দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) তার বাসায় ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে তারই ঘরের গৃহকর্মী আকাশ (২৫)।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আরও তিন সহযোগী। পরে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দু’জন পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও বাকি দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তিন ঘণ্টা অভিযান শেষে দুপুর সোয়া দুইটার দিকে পুলিশ কাজী লোকমান হোসেনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় চার ডাকাতের পরিচয় প্রকাশ করেছে পুলিশ। তারা হলেন- আকাশ (২৫), বায়েজিদ শেখ (১৯), সাব্বির (১৯) ও রিয়াদ (২০)। এর মধ্যে আকাশ ও বায়েজিদকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও বাকি দু’জন এখনও পলাতক।
পুলিশ জানিয়েছে, আকাশ লোকমানের ঘরে কাজ করেন। লোকমানের খুব কাছের মানুষ আকাশ। ডাকাতির মূল পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। লোকমানের ঘরে সাব্বির (১৯) মালি ও রিয়াদ (২০) গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। এক বছর আগে তাদের ছাঁটাই করেন লোকমান। এর জের ধরেই এ ডাকাতির পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা।
পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সোলায়মান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘বায়েজিদ, রিয়াদ, সাব্বির নামে তিনজন ডাকাতি করতে ওই বাসায় ঢুকেছিলেন। তার বাসার সব কাজ সে করে দিত। রিয়াদ ও সাব্বিরও তার বাসায় কাজ করতেন। তবে তাদের এক বছর আগে ছাঁটাই করেন লোকমান। এর জের ধরেই এ ডাকাতির পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে ধারণা।
ওসি মো. সোলায়মান আরো বলেন, ‘ঘটনা খবর পাওয়ার পর পরই আমি ঘটনাস্থলে আসি। প্রথমে ঘরের দরজা ভেঙে একটি শোবার রুমে ঢুকি। সেখানে রক্ত দেখতে পাই। ততক্ষণে আকাশ তার মালিক লোকমানকে একটি বাথরুমে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি সঙ্গে সঙ্গে সিনিয়য় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সোয়াত টিমের সদস্যদের পাঠাতে বলি। পরে সবার চেষ্টায় ভিকটিমকে আমরা উদ্ধার করি। পাশের রুমে থেকে তার স্ত্রীকে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করি।’
ওসি বলেন, ‘তাদের উদ্দেশ্যে ছিল ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া। কিন্তু আমরা ভবনের ম্যানেজার বাবলু ও লোকমানের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। কোনো কিছুই তারা নিয়ে যেতে পারিনি। আকাশ ও বায়েজিদকে আমরা গ্রেফতার করেছি। রিয়াদ ও সাব্বির পালিয়ে গেছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাজী লোকমান হাকিম শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল খায়েরের মেয়ের জামাতা। তিনি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কের আল-হিদায়াহ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পাশের ভবন ঘিরে রেখেছে পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটিলিয়ন (র‍্যাব) ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। আশপাশে উৎসুক জনতা ভিড় করে আছে। প্রথমে শীর্ষস্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ধরতে ওই ভবন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘিরে রেখেছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভবন মালিক কাজী লোকমান হাকিমের ঘরে ডাকাতি করার সময় সেখানে কয়েকজন ডাকাত আটকে পড়েছেন এবং ডাকাতরা তাকে বাথরুমে ঢুকিয়ে আটকে রেখেছেন। পরে সেখানে যোগ দেয় পুলিশের বিশেষ ইউনিট সোয়াত।
দুপুর দুইটার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ। তার ১৫ মিনিট পরেই বিকট একটি শব্দ হয়। এর পরপরই কাজী লোকমান হোসেনকে ভবন থেকে বের করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে ঢুকিয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
দুপুর আড়াইটায় ভবন থেকে বের হয়ে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘বাড়িটিতে ডাকাত প্রবেশ করে ঘরের লোকজনকে জিম্মি করে রেখেছিল। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ আসার আগেই পালিয়ে যাওয়ার সময় বায়েজিদ নামে একজনকে আটক করেছে স্থানীয়রা। বাড়ির মালিককে একজন ডাকাত সদস্য জিম্মি করে বাথরুমে আটকে রেখেছিল। আমরা সাউন্ড গ্রেনেড ফাটিয়ে তাকে উদ্ধার করেছি। তিনি সামান্য জখম হয়েছেন।
সিএমপি কমিশনার বলেন, অপরাধ করে কেউ পার পাবেনা, পলাতকদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।