একুশে পদকে ভূষিত হলেন ওস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া

স্টাফ রিপোর্টার : সঙ্গীতে একুশে পদক-২০২৫ (মরনোত্তর) এ ভূষিত হলেন খ্যাতিমান সংগীতগুরু ওস্তাদ নিরোদ বরণ বড়ুয়া।

ওস্তাদ নিরেদ বরণ বড়ুয়ার সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্যঃ

উপ মহাদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র বিশিষ্ট সঙ্গীত বিশারদ ওস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া’র জন্ম চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আবদুল্লাপুর গ্রামের এক সম্রান্ত বৌদ্ধ পরিবারে ১৯৩৬ সালে। পিতা স্বর্গীয় নিকুঞ্জ বিহারী বড়ুয়া ও মাতা স্বর্গীয়া বিরলা বালা বড়ুয়ার একমাত্র পুত্র সন্তান তিনি। আজীবন সত্যিকার অর্থে সঙ্গীতপ্রাণ এ মানুষটি চৌদ্দ বছর বয়সে পিতৃহারা হন এবং পনের বছর বয়সে সঙ্গীত শিক্ষার উদ্দেশ্যে কোলকাতা গমন করেন। সেখানে তাঁর প্রথম হাতে খড়ি হয় ওস্তাদ নাটু ঘোষের কাছে। তিন বছর যাবত নাটু ঘোষের কাছে সঙ্গীত শিক্ষা লাভের পর তিনি বিশিষ্ট ধ্রুপদ গায়ক অনিল ঘোষের কাছে পাঁচ বছর ধ্রুপদ ধামার শিক্ষা করেন। এরপর ভর্তি হন অল ইন্ডিয়া মিউজিক কলেজে। সেখানে সঙ্গীতাচার্য শ্রী প্রফুল্ল কুমার সেন মহোদয়ের অধীনে আরো দীর্ঘ সাত বছর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে গভীর জ্ঞান লাভ করেন এবং স্নাতক প্রাপ্ত হন। অতঃপর ১৯৬৫ সালে তিনি স্থায়ীভাবে স্বদেশে ফিরে আসেন।
তাঁর বিকশিত সঙ্গীত প্রতিভায় আকৃষ্ট হন চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টের তৎকালীন সিনিয়র মেডিকেল অফিসার কামাল এ, খান, তিনি ওস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়াকে গভীর আগ্রহ সহকারে নিজ বাসভবনে রাখেন এবং চট্টগ্রামের সুধী সমাজে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন। ক্রমে তিনি চট্টগ্রাম বেতার কর্তৃপক্ষের সাথে পরিচিত হন এবং তাঁদের অনুরোধে চট্টগ্রাম বেতারে যোগদান করেন।
পাক-ভারত উপমহাদেমের ঐতিহ্যবাহী সুপ্রাচীন সঙ্গীত কেন্দ্র, চট্টগ্রাম আর্য্য সঙ্গীত সমিতি, তাঁকে বরণ করে নেন আর্য সংগীত সমিতি কর্তৃক পরিচালিত ‘সুরেন্দ্র সঙ্গীত বিদ্যাপীঠ’র একজন সঙ্গীত শিক্ষক হিসেবে। ওস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া আর্য সংগীত খ্যাত সুরেন্দ্র সংগীত বিদ্যাপীঠে দীর্ঘ পঁচিশ বছর যাবত অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত থেকে চট্টগ্রামে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ক্ষেত্রে নবযুগের সূচনা করেন এবং চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশে অসংখ্য গুণী-জ্ঞানী ছাত্র-ছাত্রী সৃষ্টি করেছেন। যারা এখন দেশ-বিদেশে সুনামের সাথে সংগীত সাধনায় রত আছেন। ১৯৮৮ সালে তিনি আর্য সংগীত থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণ করার পরও বৃদ্ধ বয়সে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ উপেক্ষা করতে না পেরে ওস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের নিকটস্থ মোমিন রোডস্থ তাঁর বাসভবনে আবার শিক্ষা দেয়া শুরু করেন। ক্রমে ক্রমে বাসাটাই সঙ্গীত বিদ্যালয়ে রূপ নেয়। যা বর্তমানে “সুর সপ্তক সঙ্গীত বিদ্যাপীঠ” নামে পরিচিতি লাভ করে।
বাংলাদেশের সর্বপ্রথম সম্ভবতঃ এখনও পর্যন্ত সঙ্গীত বিষয়কে ভিত্তি করে একমাত্র নাটক (যা চলচ্চিত্র উপযোগীও বলা চলে) “সুরের সন্ধান’র রচয়িতা নীরদ বরণ বড়ুয়া। এ নাটকটি পর পর দুবার মঞ্চস্থ হয় এবং খুবই প্রশংসা অর্জন করেন। ওস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া রচিত সংগীত বিষয়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,প্রয়োজনীয় গ্রন্থ – আরোহ -আবরোহ সংগীত পিপাসু, সংগীত অনুরাগী, সংগীত শিক্ষার্থীদের কাছে আলোর দিশারী হয়ে পথ দেখাচ্ছ। ২০০১ সালের ৯ আগস্ট অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী,গুণগ্রাহী,সংগীত পিপাসুদের শোক সাগরে ভাসিয়ে ওস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া পরপারে জমান।

যশস্বী ওস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া তাঁর কর্ম-কৃর্তির জন্য, একজন শুদ্ধতম সাঙ্গীতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য সংগীতাঙ্গনে অজর-অমর-অক্ষয় হয়ে থাকবে। শাস্ত্রীয় সংগীতে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ এই নন্দিত সংগীত গুরুকে মরণোত্তর রাষ্ট্রের ২য় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক-২০২৫ (মরনোত্তর) এ ভূষিত হয়েছেন।